কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা যেভাবে করবেন

আমাদেরকে দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল কিডনি। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী পুরুষের কিডনি রোগ হয়ে থাকে। বিশ্বাস করে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের এই রোগ টা অনেক বেশি হয়। দেখা যায় অধিকাংশ কিডনি রোগীরা উল্টাপাল্টা ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগকে আরো মারাত্মক করে তোলে। কিন্তু আপনি যদি প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম মেনে চলেন। এবং সেই সাথে যদি কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কিডনি রোগটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। এই কারণে অবশ্যই আপনাকে প্রাকৃতিক ও ভেষজ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

তাই কিডনি রোগীদের সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেল আমরা কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা যেভাবে করবেন ও কিডনি রোগের ভেষজ চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তারা আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা

মানবদেহের যেকোনো রোগের ঔষধ সেবন না করে, আমরা যদি প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহণ করি। তাহলে আমাদের সেই ওষুধের সাইড ইফেক্ট হবে না। এই কারণে আমরা সবসময় চেষ্টা করবো, মানবদেহের সকল রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা নেওয়ার।

তেমনি মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ হল কিডনি রোগ। তাই কিডনি রোগের কোন ক্ষতিকর মেডিসিন সেবন না করে,প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। তাহলে দেখবেন আপনার কিডনি রোগ আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাচ্ছে। চলুন জেনে নেই, কিডনি রোগের জন্য আপনি প্রাকৃতিক কি কি চিকিৎসা নেবেন।

প্রচুর পানি পান করা

কিডনি রোগ মূলত সৃষ্টি হয় কিডনির ফিলট্রেশন কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় কারণে। এই কারণে আপনাকে কিডনির ফিলট্রেশন এর কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। কিডনির ফিলট্রেশন কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে আপনাকে নিয়মিত পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত আপনাকে সর্বনিম্ন দশ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

বিশেষ করে দিনের শুরুতে আপনাকে দুই থেকে তিন গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত পানি পান করেন,তাহলে আপনার দেহ অনেক সুস্থ থাকবে। তাই আপনি যদি কিডনি রোগে প্রাকৃতিক উপায়ে ভালো করতে চান,তাহলে নিয়মিত সর্বনিম্ন ১০ গ্লাস পানি পান করুন। আপনি যেকোনো ধরনের পানি পান করতে পারবেন। ফোটানো অথবা সাধারণ পানি পান করা যাবে। তবে ফ্রিজের পানি পান করা থেকে বিরত থাকবেন।

Read More:  অনার্স সাবজেক্ট কি কি | honours subject ki ki

পুষ্টিকর খাবার সেবন করা

একজন ব্যক্তির দেহে যদি কিডনি রোগ হয়,তখন তার দেহে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এই কারণে আপনাকে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে দুধ,ডিম ,আপেল,শাকসবজি ও ভিটামিন। এছাড়াও আপনি সামুদ্রিক মাছ ও ছোট মাছ খেতে পারেন। যা আর দেহকে আরো পুষ্টিকর করে তুলবে।

আপনি যে ধরনের পুষ্টিকার খাবার গ্রহণ করেন না কেন। অবশ্যই আপনাকে নিয়মমাফিক খাবার গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। এমন অনেক কিডনি রোগী আছে যারা অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তাদের রোগটা আরো বেড়ে যায়। তাই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যা কিডনির জন্য ভালো হয়। কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা ধারণায় এটা উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন গ্রহণ করা

কিডনি রোগের জন্য আপনাকে নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন কিন্তু আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য আপনাকে স্বল্প পরিমান প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, কলিজা এবং মাছের ডিম, মটরশুটি,ডাল, শুঁটকি মাছ ইত্যাদি।

আপনাকে নিয়ম করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। আপনি যদি নিয়ম মেনে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে না পারেন। তাহলে অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যা আপনার কিডনি রোগকে দ্রুত সারাতে সাহায্য করবে। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে তার বিপরীত হতে পারে। তাই পরিমিত পর্যায়ে আপনাকে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।

সাইট্রাস যুক্ত টক ফল থেকে বিরত থাকুন

বর্তমান কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাইট্রাস যুক্ত টক ফল কিডনি রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। তাই যত ধরনের সাইট্রাস যুক্ত টক ফল আছে যেমন, লেবু, কমলা, মাল্টা, আমলকি, আম,আমরা, তেঁতুল ইত্যাদি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

Read More:  নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের বিষয় সমূহ | এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগের বিষয় সমূহ

এছাড়াও উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফল যেমন, কলা,আনারস, আপেল, বেদানা, নাশপাতি, পেয়ারা, কাঠাল, বড়ই,জাম,আতানয়া ইত্যাদি পরিমিত পরিমান খাওয়া যাবে। তবে সাইট্রাস যুক্ত টক ফল থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবেন।

প্রতিদিন ব্যায়াম করা

আমাদের দেহের যেকোনো রোগের জন্য ব্যায়াম কার্যকরী একটি প্রক্রিয়া। তাই আপনার যদি কিডনি সমস্যা হয়ে থাকে,তাহলে অবশ্যই ব্যায়াম করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেছেন কিডনি রোগীরা কখনো অতিরিক্ত ব্যায়াম করতে পারবে না। অর্থাৎ আপনাকে জগিং,পুশ আপ, বুক ডাউন ও অতিরিক্ত দৌড় এরকম ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে হবে।

এইজন্য আপনি ইচ্ছা করলে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। অর্থাৎ আপনি যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম কিডনি রোগীদের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী হয়। তাই আপনি প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়াও ৩০ মিনিট স্বাভাবিকভাবে বা কিছুটা দ্রুত হাটা ইত্যাদি নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে আপনার কোন সমস্যা হবে না।

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষের মত অভ্যাস হলো দীর্ঘ সময় রাত জাগা। আপনার যদি এরকম কোনো বদ অভ্যাস থাকে, তাহলে এখনই পরিহার করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত রাত জাগলে কিডনি রোগীদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়। তাই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। দিনে ঘুমানোর চেয়ে আপনি রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। রাতে সর্বনিম্ন ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা কার্যকলাপে পর্যায়ে ঘুমানোর বিষয়টা অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ।

ধুমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন

কিডনি রোগের অন্যতম একটি কারণ হলো ধূমপান ও মদ্যপান করা। তাই আপনার যদি ধূমপান ও মদ্যপান করার কোন বদ অভ্যাস থাকে। তাহলে অবশ্যই সুস্থ থাকার জন্য এগুলো পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে মদ্যপান কিডনি রোগের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।

কিডনি রোগের ভেষজ চিকিৎসা

কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসার সাথে যদি আপনি ভেষজ চিকিৎসা করেন, তাহলে আপনার কিডনি রোগ অতি দ্রুতই সেরে যাবে। তাই ইচ্ছা করলে আপনি প্রাকৃতিক উপায় গুলোর সাথে ভেষজ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন।

Read More:  ব্যবসায় শাখার বিষয়সমূহ জেনে নিন

ধনে পাতার জুস সেবন করুন

ধনেপাতা আমাদের মানব দেহের জন্য অত্যন্ত কার্যকারী একটি উপাদান। ঠিক তেমনি ভাবে ধনেপাতা কিডনি রোগীদের অনেক উপকারী একটি উপাদান। তাই সকল কিডনি রোগীরা প্রতিদিন সকালে ধনেপাতা জুস খেতে পারেন। অনেকে আছে যারা ধনেপাতার সরাসরি খেতে পারেন না। তারা হালকা চিনি মিশে ধনেপাতার জুস সেবন করুন। দেখবেন এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার কিডনি রোগ কমে যাবে। শুধু কিডনি রোগ নয় অন্যান্য অনেক রোগের উপকার পাওয়া যায় ধনেপাতার জুস খেলে।

পেঁয়াজ খেতে পারেন

পেঁয়াজে আছে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনোয়েড রয়েছে। যা রক্তের চর্বি দূর করে থাকে। পেঁয়াজ আরো একটি উপাদান আছে তা হলো কুয়ারসেটিন, যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়াও পেঁয়াজে পটাশিয়াম,প্রোটিন আছে যা কিডনির জন্য অনেক বেশি উপকারী। তবে অতিরিক্ত পেঁয়াজ খেলে আপনার কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তাই পরিণত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পিঁয়াজ খাবেন যা আপনার জন্য ভালো হবে।

নিয়মিত আপেল খান

গবেষণায় দেখা গেছে কোন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন একটি করে আপেল খায় না,তাহলে তার দেহে কোন রোগ হবে না। এছাড়াও শরীরের জন্য আপেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আপেলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি, যা বাজে কোলেস্টেরল দূর করে। আপনার শরীর থেকে যখন বাজে কোলেস্টেরল চলে যাবে, তখন কিডনি রোগ ভালো হবে। এছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের জন্য আপনি নিয়মিত একটি করে আপেল খেতে পারেন। নিয়মিত একটি করে আপেল খেলে আপনার দেহ সুস্থ ও সবল থাকবে।

ধন্যবাদ আপনার আপনার অনুসন্ধানের জন্য এবং মূল্যবাণ সময়ের জন্য। আশাকরি আপনার কাঙ্খিত অনুসন্ধান কিডনি রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা সম্পর্কে আমাদের ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছেন। যদি এ সম্পর্কিত আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে তবে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভূলবেন না।

Mushfiqur Rahman Swopnil

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *